নবম বিজেএস পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তির ৩১ মাস পর নিয়োগ পাচ্ছেন ৭৯ সহকারী জজ আটকে গেছে ২১ জনের নিয়োগ * রোববার গেজেট জারি

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় ৩১ মাস পর নবম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার উত্তীর্ণ ৭৯ জন সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। আগামী রোববার এই নিয়োগের গেজেট জারি হতে পারে। বাকি ২১ জনের মধ্যে ১৫ জনের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন না পাঠানো ও ৬ জনের ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যয়ন না করায় তাদের নিয়োগ আটকে গেছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর নবম বিজেএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। এতে ১০০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে কমিশন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করতেই কেটে গেছে প্রায় এগারো মাস। যাচাই-বাছাই শেষে ৭৯ জনের ব্যাপারে ছাড়পত্র দেয় সরকারের ওই দুটি মন্ত্রণালয়। ২৭ ডিসেম্বর এই ৭৯ জনকে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগের গেজেট জারির জন্য সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চায় আইন মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের তিন সদস্যের জিএ (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কমিটি এই ৭৯ জনকে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। আগামী রোববার তাদের নিয়োগের গেজেট জারি করা হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাকি ২১ জনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান (জেলা জজ) পরেশ চন্দ্র শর্মা যুগান্তরকে বলেন, ‘তাদের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। সরকার আমাদের কাছে নিয়োগের সুপারিশ চায়। আমরা ১০০ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছি। আমাদের দায়িত্ব এখানেই শেষ। এখন তাদের নিয়োগ দেবে সরকার।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ৭৯ জনের প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই বাকিদের বিষয়টি পুনরায় তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বিচার বিভাগে চলছে বিচারক সংকট। বর্তমানে বিচার বিভাগের প্রবেশ পদ সহকারী জজ ও সমমর্যাদার ২২২টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ধরনের মোট ৫৩২টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৩০৫ জন সহকারী জজ ও ম্যাজিস্ট্রেট। এরপর সিনিয়র সহকারী জজ ও সমমর্যাদার ১৯৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া জেলা জজ থেকে শুরু করে যুগ্ম জেলা জজ পর্যন্ত শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র ৬৪টি। আর এ কারণে প্রবেশ পদে দ্রুত নিয়োগ প্রয়োজন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে দশম বিজেএস নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। আগামী ২২ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে। এরপর ১১৫ জনকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে কমিশন। এর পরপরই ১১তম বিজেএস পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ২৯ মে নবম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় অংশ নেন ৩ হাজার ১৯৪ জন। উত্তীর্ণ ১ হাজার ৪৯৬ জনের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪১৩ জন। পরে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ শেষে একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর এপ্রিলে ১০০ জনের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়। এ যাচাই-বাছাই শেষ করতে এবারই প্রথম ১১ মাসেরও বেশি সময় লাগে। আর পুরো প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে লাগে ৩১ মাসেরও বেশি সময় যা বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের চেয়েও বেশি বলে জানা যায়।
প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা পদে নিয়োগ হয় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। তবে সহকারী জজ নিয়োগের সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (জেএসসি)। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর ২০০৭ সালে এই কমিশন গঠিত হয়। এরপর জেএসসির সভায় ২২তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী জজ পদে নিয়োগ পাওয়াদের প্রথম বিজেএস ব্যাচ ও ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় ওই পদে উত্তীর্ণদের দ্বিতীয় বিজেএস হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জেএসসি প্রথমবারের মতো সহকারী জজ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০০৭ সালের আগস্টে। সব পরীক্ষা শেষে ছয় মাসের মধ্যে ২০০৮ সালের ১৭ মার্চ চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। উত্তীর্ণ ৩৯০ জন ২২ মে চাকরিতে যোগ দেন। এটি তৃতীয় বিজেএস ব্যাচ। ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি চতুর্থ বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয় এর প্রায় ১৬ মাস পর। ২১২ জনের যাচাইয়ে লাগে চার মাস। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয় ২০ মাসে। ২০১০ সালের ২৪ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা পঞ্চম বিজেএসে নিয়োগ পান ১২০ জন। এই নিয়োগে ২৬ মাস লেগেছে, এর মধ্যে যাচাইয়ে লাগে ১১ মাস।
ষষ্ঠ বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের জুনে। ১২৫ জনের এই ব্যাচের নিয়োগে লাগে ২৮ মাস। এর মধ্যে যাচাইয়ে যায় ১৪ মাস। সপ্তম বিজেএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ২৬ জুলাই। এই ব্যাচে ৬৭ জনকে নিয়োগেও ২৮ মাস লাগে। এর মধ্যে যাচাই প্রতিবেদনে যায় ১০ মাস। অষ্টম বিজেএসে ৫৩ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লাগে ২৯ মাস। এর মধ্যে যাচাইয়ে লাগে প্রায় ১১ মাস।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর